মোবাইল অ্যাপ মার্কেটিং এর সকল স্ট্র্যাটেজি
বর্তমানে স্মার্টফোন এর জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি অ্যাপ ইউজার ব্যাপক হারে বাড়ছে। এই অ্যাপ এর পপুলারিটিকে কাজে লাগিয়ে অনেক বড় বড় কোম্পানি গ্রো হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়ছে। যেমন, ই-কমার্স বিজনেস, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ মার্কেটিং ইত্যাদি।
অন্যদিকে অ্যাপ এর পপুলারিটি যেমন বাড়ছে সেই সাথে অ্যাপের প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। মার্কেটে একই ধরণের অনেক অ্যাপ থাকলেও একটি অ্যাপ এর ইউজার অন্যটির থেকে বেশি। আর আপনি মার্কেটপ্লেস এ সার্চ দিলে দেখবেন সবার উপরে একটি অ্যাপ দেখাবে এবং সেটির ইউজার সংখ্যাও বাকিদের থেকে বেশি। এটি মূলত ভালো মার্কেটিং এর রেজাল্ট।
সুতরাং আপনি যত ভালো মার্কেটিং করবেন ততো ইউজার পাবেন।
আজকে আমরা আপনাদের অ্যাপ মার্কেটিং এর সমস্ত স্ট্র্যাটেজি শেয়ার করবো। তো চলুন শুরু করা যাক।
অ্যাপ মার্কেটিং এ কেমন বাজেট প্রয়োজন?
অ্যাপ মার্কেটিং করার আগে শুরুতেই চলে আসে মার্কেটিং-এ কত বাজেট রাখতে হবে? বা কোন ইনভেস্ট ছাড়া কি মার্কেটিং করা সম্ভব কিনা?
আসলে আপনি মার্কেটিং দুই ভাবেই করতে পারবেন। পেইড অ্যাপ মার্কেটিং আর ফ্রি অ্যাপ মার্কেটিং। পেইড আর ফ্রি অ্যাপ মার্কেটিং মধ্যে সব থেকে বড় পার্থক্য হল পেইড মার্কেটিং এ আপনি তাড়াতাড়ি ফলাফল দেখতে পাবেন। আর ফ্রি মার্কেটিং একটু সময় লাগে ফলাফল পেতে অর্থাৎ, আপনাকে লম্বা সময় হাতে রেখে মার্কেটিং করতে হবে।
আমাদের পরামর্শ হল দুইটাই একই সাথে করা, এতে আপনি তাড়াতাড়ি ফলাফল পাবেন। কারণ আপনার তখন একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেল-এর অডিয়েন্সকে টার্গেট করার সুযোগ থাকবে। এতে ভাল দিক হলো কোন চ্যানেলটি আপনার জন্য বেশি কার্যকর সেটার একটি ক্লিয়ার ধারণা পাবেন। ধরুন: আপনার পেইড মার্কেটিং-এ বেশি রিটার্ন পাচ্ছেন সেই ক্ষেত্রে আপনি তখন পেইড মার্কেটিং এ বেশি ইনভেস্ট করবেন।
পেইড মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে শুরুতে ৫০০ ডলার বাজেট রাখা ভালো, এর কম বাজেট এ আপনি হয়তো শুরু করতে পারবেন তবে আপনাকে একটি সিদ্ধান্তে সিদ্ধান্তে আসতে হলে একটু বেশি বাজেট নিয়ে পেইড ক্যাম্পেইন রান করা ভালো।
একই ভাবে ফ্রি মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যত বেশি সময় নেয়া যায় ততো ভাল, তবে মিনিমাম ২-৩ মাস সময় নিবেন।
তো চলুন বাজেট নিয়ে আইডিয়া হয়ে গেলে এখন আমরা মূলত মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করি।
অ্যাপ স্টোর অপটিমাইজেশন (ASO)
অ্যাপ মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ লিস্ট এর মধ্যে ASO সবার উপরে থাকবে। তাই অবশ্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল, ASO কি?
আপনারা নিশ্চয়ই সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO) এর ব্যাপারে জানেন, জেনে থাকলেও আবার ছোট্ট করে বলছি, SEO মূলত আপনার ওয়েবসাইট কে গুগল এর সার্চ রেজাল্ট এর সবার উপরে দেখানোর জন্য করা হয়।
অন্যদিকে অ্যাপ স্টোর অপ্টিমাইজেশন (ASO) একই উদ্দেশে করা হয়, তবে সেটি অ্যাপ মার্কেটপ্লেস এর জন্য। অর্থাৎ অ্যাপ মার্কেটপ্লেস সার্চ রেজাল্ট-এ সবার উপরে দেখানোর জন্য অ্যাপ স্টোর অপ্টিমাইজেশন করতে হবে।
ASO কিভাবে করবেন?
১। কিওয়ার্ড রিসার্চ: আপনার অ্যাপ এর বিষয়ে মানুষ সব থেকে বেশি কি ধরণের ওয়ার্ড লিখে গুগলে সার্চ করে, সেগুলো বিভিন্ন কিওয়ার্ড রিসার্চ টুল দিয়ে সহজেই বের করতে পারবেন, সেগুলো বের করে একটি লিস্ট তৈরী করুন এবং ওই কিওয়ার্ড গুলো আপনার অ্যাপ ও ডিস্ক্রিপশনে ব্যবহার করুন।
২। কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস: আপনার টপ কম্পিটিটর এর সকল এক্টিভিটিস অ্যানালাইসিস করুন যেমন: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, তারা প্লেস্টোরে কি ধরণের কিওয়ার্ড টার্গেট করছে, ইত্যাদি অনুসরণ করুন।
৩। অ্যাপ নাম এবং ডিস্ক্রিপশন: অবশ্যই আপনার অ্যাপ এর নাম ও ডিস্ক্রিপশন মানুষ জন যে ওয়ার্ড লিখে বেশি সার্চ করে ঐটি অনুসরণ করে রাখতে হবে এবং রিলেভেন্ট হতে হবে।
৪। স্ক্রিনশট এবং প্রোমো ভিডিও: ভালো ভাবে ডিজাইন করে আপনার অ্যাপ এর কিছু সেরা ফিচার স্ক্রীনসট অ্যাড করুন পাশাপাশি একটি প্রমো ভিডিও বানিয়ে অ্যাড করুন।
৫। রিভিউ এবং রেটিং: মার্কেটপ্লেসগুলোর এলগোরিদম ইউজার রিভিউ রিড করে তাই এটি খুব গুরুত্বপূর্ন ASO এর ক্ষেত্রে। চেষ্টা করুন আপনার ইউজারদের খুশি রেখে তাদের কাছ থেকে রিভিউ চাওয়া।
৬। লোক্যালাইজেশন: আপনার অ্যাপ যদি বিভিন্ন দেশে লঞ্চ করা হয়, সেক্ষেত্রে ভালো একজন ট্রান্সলেটর দিয়ে প্রতিটি দেশের জন্য অ্যাপের নাম, ডিস্ক্রিপশন এবং কীওয়ার্ডগুলিকে ট্রান্সলেট করুন।
৭। অ্যাপ স্টোর অ্যানালিটিক্স: আপনার অ্যাপ এর অ্যানালিটিক্স ড্যাশবোর্ড-এ খেয়াল রাখুন। সেখানে আপনার অ্যাপ এর সকল ডেটা দেখিতে পারবেন। ঐ ডেটা গুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডাটা গুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি বিভিন্ন মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেন। যেমন: কোন দেশের ইউজার সব থেকে বেশি ওই দেশের কোনো ইভেন্ট আসলে তাদের জন্য আলাদা করে শুভেচ্ছা বার্তা অ্যাপ এ দেখাতে পারেন। এতে ইউজার এনগেজমেন্ট বাড়ে, যেটি সার্চ রেজাল্ট উন্নতিতে হেল্প করে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং এর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চেষ্টা করুন আপনার অ্যাপ এর নামে সকল প্লাটফর্ম, যেমন: ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক, এক্স, ইত্যাদি প্লাটফর্ম গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা এবং সেখানে নিয়মিত পোস্ট করা। তাহলে সেখান থেকে আপনি অনেক ইউজার পাবেন। অনেক অ্যাপ আছে যারা শুধুমাত্র টিকটক ভিডিও পোস্ট করে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউজার গেইন করেছে।
ইমেইল মার্কেটিং
একজন ইউজার যখন অ্যাপ এ অ্যাকাউন্ট করবে তখন তার ইমেইল ডেটা আপনার ডেটাবেজ এ থাকবে। আপনার ইউজারদের ইমেইল এ বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন, যেমন ওয়েলকাম ক্যাম্পেইন, বিভিন্ন অফার ক্যাম্পেইন, প্রমোশনাল ক্যাম্পেইন ইত্যাদি। এই মার্কেটিং ক্যাম্পেইন ইউজারদের অ্যাপে এনগেজ রাখতে সহায়তা করে।
রেফারাল প্রোগ্রাম
আরেকটি অন্যতম সেরা কার্যকরী পদ্ধতি হলো রেফারাল। রেফারাল প্রোগ্রাম হলো একজন অ্যাপ ইউজার এর জন্য অ্যাপে ডেডিকেটেড লিংক তৈরী করা থাকবে, ঐ লিংক এর মাধ্যমে সে তার পরিচিতদের অ্যাপ ইন্সটল করাতে পারবে, এর বিনিময়ে ইউজার কিছু রিওয়ার্ড পাবে। রিওয়ার্ড সিস্টেম এর কারণে এই স্ট্র্যাটেজিটি অনেক কার্যকরী। তাই অ্যাপে এই ফিচারটি রাখার চেষ্টা করুন।
গুগল অ্যাডস
আমরা HubXpert মার্কেটিং টিম এর ডজন খানেক ক্লায়েন্ট এর অ্যাপ মার্কেটিং এর এক্সপেরিয়েন্স থেকে দেখেছি যে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস এর জন্য সবথেকে বেষ্ট অপশন হলো গুগল অ্যাডস আর iOS এর জন্য বেস্ট অ্যাপল সার্চ অ্যাডস।
তবে পেইড অ্যাডস ক্যাম্পেইন এফেক্টিভলি রান করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ একটি এফেক্টিভ ক্যাম্পেইন আপনার ইনভেস্টমেন্ট এর বহুগুন রিটার্ন 'এনে দিতে পারে। এফেক্টিভ ক্যাম্পেইন চালানোর ক্ষেত্রে যে জিনিসগুলো গুরুত্বপূর্ণ:
১। হেডলাইন এ কীওয়ার্ড থাকতে হবে, যদিও গুগল ৩০টি ক্যারেক্টার এর বেশি একসেপ্ট করেনা তাই এত কম লিমিটেশনের মধ্যে কীওয়ার্ড রাখাটা একটু কষ্টকর তবে চেষ্টা করবেন অন্তত একটি কীওয়ার্ড অ্যাড করার।
২। ডিস্ক্রিপশন এ কীওয়ার্ড অ্যাড থাকতে হবে।
৩। সঠিক বিড রেট রাখা। সঠিক বিড স্ট্র্যাটেজি জানতে গুগলের এই ডকুমেন্টেশনটি পড়তে পারেন।
কোন চ্যানেল আপনার জন্য কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে
অ্যাপ প্রোমোশন এর জন্য যেই চ্যানেলটি বেশি কার্যকরী সেখানে বেশি ফোকাস দেয়া উত্তম। আপনার অ্যাপ এর জন্য কোন চ্যানেলটি বেশি কার্যকর সেটা জানার জন্য আপনাকে একটু রিসার্চ করতে হবে। যেমন: ফটো এডিটিং অ্যাপস এর জন্য সবথেকে বেষ্ট চ্যানেল হল ইনস্টাগ্রাম, কারণ অডিয়েন্স ছবি দেখতে বা পোস্ট ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে থাকে, বিষয়টি ফটো এডিটিং এর সাথে সামঞ্জস্য থাকায় ইনস্টাগ্রাম এত কার্যকর। একই ভাবে ভিডিও এডিটিং অ্যাপস এর জন্য ইউটিউব, টিকটক, ইত্যাদি। এছাড়া কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস এর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার চ্যানেল এর জন্য বেস্ট চ্যানেল খুঁজে পাবেন।
মোবাইল অ্যাপ মার্কেটিং এর বেস্ট প্র্যাকটিস
নিচে ৫ টি অ্যাপ মার্কেটিং এর জন্য বেষ্ট প্র্যাকটিস লিস্ট শেয়ার করা হল:
১। টার্গেট অডিয়েন্স এর সম্পর্কে বোঝা: আপনার অ্যাপ ইউজারদের সম্পর্কে অ্যানালাইসিস করুন, যেমন তাদের জেন্ডার, লোকেশন, বয়স ইত্যাদি।
২। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স: আপনি যতই ভালো মার্কেটিং করেন না কেন অ্যাপ এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ভালো না হলে ভালো ফলাফল পাবেন না। তাই এটির উপরে বেশি জোর দিন যেন ইউজার সহজে আপনার অ্যাপ ব্যাবহার করতে পারে।
৩। সাপোর্ট/রিপোর্ট অপশন রাখা: ইউজার কোন প্রবলেম এ পড়লে যেন আপনাদের জানাতে পারে এটি নিশ্চিত করা।
৪। অ্যাপ ল্যান্ডিং পেইজ: চেষ্টা করুন আপনার অ্যাপ এর জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা। ওয়েবসাইট এ অ্যাপ এর সম্পর্কিত সকল ফিচার এর বিস্তারিত অ্যাড করুন এবং ওয়েবসাইটে ব্লগ পেইজ তৈরি করুন, সেখানে নিয়মিত আপনার অ্যাপ সম্পর্কিত ব্লগ কন্টেন্ট পাবলিশ করুন, এতে SEO তে হেল্প হবে।
৫। সব সময় আপডেট রাখা: কম্পিটিশন এ এগিয়ে থাকতে হলে বর্তমানের সকল ট্রেন্ড এর সাথে আপনার অ্যাপ কে আপডেটেড রাখুন।
পরিশেষে, এই ব্লগে মোবাইল অ্যাপ মার্কেটিং এর কয়েকটি সেরা স্ট্র্যাটেজিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে স্ট্র্যাটেজিগুলো সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজের মত করে অ্যানালাইসিস করে মার্কেটিং করতে হবে। আজ এই পর্যন্তই, পরবর্তীতে অ্যাপ মার্কেটিং এর নতুন কোন স্ট্র্যাটেজি আসলে এই ব্লগ এ অ্যাড করা হবে, আর ব্লগটি ভালো লাগবে আপনার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।